পিংক ফ্লয়েড

রক মিউজিকের ফ্যান, কিন্তু পিংক ফ্লয়েডের গান শোনেন নি এরকম মানুষ খুঁজে বের করা মোটামুটি কঠিন ব্যাপার। Comfortably Numb, Hey You, Wish You Were Here এই গানগুলো সবারই শোনা। ব্রিটিশ এই ব্যান্ডের মিউজিক নিয়েই আজকের লেখা।

গিটারিস্ট রজার ওয়াটার্স আর ড্রামার নিক ম্যাসন পড়ত লন্ডন পলিটেকনিকে। আর্কিটেকচারের ছাত্র কিবোর্ডিস্ট রিচার্ড রাইটকে নিয়ে শুরু হয় তাদের ব্যান্ড। গিটারে আসে সিড ব্যারেট নামের এক তরুণ মিউজিকাল জিনিয়াস। তাকে  নিয়ে প্রথম এলবাম বেরুলো ১৯৬৭ তে, The Piper at the Gates of Dawn। এলবামের বেশিরভাগ গান সিডের লেখা। সমস্যা হল, সিড ছিল এলএসডিতে আসক্ত। বিবিসিতে ফ্লয়েডের তিনটাশো করার কথা ছিল , দ্বিতীয় শো এর পরপরেই সিডের আচরণে অসংলগ্নতা ধরা পড়ে। তাকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরমধ্যে গিটার থেকে চলে এল রজার, সিডের বিদায়ের কিছুদিন আগে নতুন গিটারিস্ট হিসেবে যোগ দেয় ডেভিড গিলমোর। এতদিন ভোকালের কাজটাও করত সিড, গিলমোরের উপর গিটার আর ভোকাল দুটোর দায়িত্বই পড়ে। এতক্ষণে নিশ্চয় গুলিয়ে ফেলেছেন পাঠক! সহজ কথায় এখন ড্রামে নিক মেসন, কিবোর্ডে রিচার্ড রাইট, গিটার কাম ভোকালে গিলমোর আর বেজে রজার ওয়াটার্স।

Pink_Floyd_(Logo)
ব্যান্ডের এর পরের কাহিনিটুকু বেশ চমকপ্রদ। একে একে এলবাম বেরুতে থাকে  A Saucerful of Secrets, More, Ummagumma, Atom Heart Mother। পশ্চিমে তখন ড্রাগের প্রভাব অনেক বেশি। আর সাইকিডেলিক রক মিউজিকও কেমন একটা ঘোরের সৃষ্টি করে। সবমিলিয়ে পিংক ফ্লয়েডের জনপ্রিয় হতে সময় লাগল না। ক্রিম, দা জিমি হেনড্রিক্স এক্সপেরিয়েন্সের সাথে পিংক ফ্লয়েডও তখন মেইনস্ট্রিম ব্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পেয়ে গেল। পরের এলবামের নাম  Meddle । ফ্লয়েডের মিউজিকের নতুন মোড়টা ঘুরল এখানে। ডেভিড গিলমোরের মিউজিকাল জিনিয়াসের প্রকাশ বেশ ভালোভাবেই হল এই এলবামে। Echoes এই এলবামের সবচেয়ে জনপ্রিয় গান ।। মজার ব্যাপার হল, গিলমোর প্রথমে গানটি গাইতেই চান নি এর ডার্ক থিমের কারণে। গানের নামটাও প্রথমে ছিল “Nothing”!
৫ কোটির বেশি কপি বিক্রি হওয়া পরের এলবামের নাম  The Dark Side of the Moon। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া গানের এলবামের তালিকায় এটি প্রথম পাঁচেই আছে। জীবনবোধ, সামাজিক ব্যবস্থা নিয়ে লেখা লিরিকগুলো এককথায় মনকাড়া।

 

Dark_Side_of_the_Moon
Dark Side of the Moon album cover

“There’s someone in my head and it’s not me!”

“Tired of lying in the sunshine staying home to watch the rain..
You are young and life is long and there is time to kill today…
And then one day you find ten years have got behind you..
No one told you when to run, you missed the starting gun”

সম্ভব হলে সবগুলো লিরিকই তুলে দিতাম! পাঠক গুগল করে নেবেন।


Wish You Were Here আমার সবচেয়ে প্রিয় পিংক ফ্লয়েড এলবাম । রিলিজ হয় ১৯৭৫ সালে। মাত্র ৫ টা গান ছিল এলবামে, তার মধ্যে Shine on You Crazy Diamond নামের দুইটি গান ছিল মূলত ইন্সট্রুমেন্টাল। টাইটেল গানটি লেখা সাবেক ব্যান্ড মেম্বার সিড ব্যারেটকে নিয়ে। লিরিকের ইমপ্রুভমেন্ট চরমে পৌঁছায় এই এলবামে। Animals এলবামেও এই ধারা অব্যাহত থাকে  আগের এলবামগুলোতে গিলমোরের লেখা গান ছিল বেশি, Animals এলবাম থেকে শুরু হয় ওয়াটার্সের সং-রাইটার হিসেবে আত্মপ্রকাশ। যার চরম নমুনা দেখা গেল পরের এলবামে।…..

wall30th_big
The Wall এর ব্যাপারে বলার আগে কনসেপ্ট এলবাম কি সেটা একটু বলি। একটা সার্টেইন থিমের উপর ভিত্তি করেই যখন একটা এলবামের গানগুলো লেখা আর সুর করা হয় , সেটাকে কনসেপ্ট এলবাম বলে। Camel এর Stationary Traveller কনসেপ্ট এলবামের অনন্য উদাহরণ, লেখা হয়েছিল দুই জার্মানির বিভাজন নিয়ে। The Wallএর থিমটা ছিল সাদাসিধে এক ছেলে, যার নাম পিংক, তার জন্ম থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত চারপাশে তৈরি হওয়া নানারকম অদৃশ্য দেয়াল নিয়ে। অসম্ভব জনপ্রিয় হয় এলবামটি ; যার বেশিরভাগ গানই রজারের লেখা। বিশেষ করে শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা নিয়ে লেখা Another Brick in the Wall 1,2,3 গানগুলো সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে যায়। এই এলবামের লাইভ পারফরমেন্সগুলো মিউজিকের জগতে অসাধারণ এক সংযোজন। কার্ডবোর্ড দিয়ে দেয়াল বানানো, নানারকম পাপেট দিয়ে চরিত্রগুলোর রূপায়ন আর সবশেষে দেয়ালটা ভেঙে ফেলা – এলবামের থিম, লিরিক সবকিছুর এরকম দৃষ্টিগ্রাহ্য উপস্থাপনা অদ্ভুত এক আবহ সৃষ্টি করে।

pink-floyd-wall-concert-1990-berlin
এরমধ্যে ব্যান্ড মেম্বারদের মধ্যে ঝামেলা পাকিয়ে উঠেছে ভালো করেই। রজার আর গিলমোরের মধ্যে ইগো নিয়ে সংঘর্ষ আগে থেকেই ছিল , The Final Cut এলবাম প্রকাশের পর সেটা নতুন রূপ পেল। ফলাফল – ১৯৮৫ তে   রজারের প্রস্থান। গিলমোর ব্যান্ড চালিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন মেসন আর রিচার্ডকে নিয়ে। আরও দুটি অসাধারণ এলবাম রিলিজ হয় গিলমোরের হাত ধরে – A Momentary Lapse of Reason, The Division Bell।  দুটোই বেশ জনপ্রিয় হয়। এরপরেই ব্যান্ডটি ভেঙে যায় একেবারেই। ২০০৫ সালে হয় একটি রি-ইউনিয়ন কনসার্ট, ২০০৮ এ ক্যান্সারে মারা যান রিচার্ড রাইট।
এতকিছুর পরেও ২০১৪ এর নভেম্বরে নিক মেসন আর গিলমোর মিলে সর্বশেষ ফ্লয়েড এলবামটি বের করেন আগের কিছু ডেমো টেপের উপর ভিত্তি করে। পুরো এলবামে কেবল একটা গানেই লিরিক ছিল, গিলমোরের স্ত্রীর লেখা  Louder than Words।

PinkFloydEndless6065903
গিলমোরের ভাষ্যমতে আর কোন পিংক ফ্লয়েড এলবাম পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। কিন্তু পিংক ফ্লয়েড যে পিনিক তৈরি করে গেছে, তাতে শ্রোতারা আজীবন বুঁদ হয়ে থাকবে তাতে সন্দেহ নেই।

পুনশ্চ – ব্যান্ড ছাড়ার পরেও ১৯৯০ সালে অনেক অতিথি শিল্পীদের নিয়ে রজার ওয়াটার্স বার্লিনে একটি The Wall কনসার্ট করেন। আর্টিস্টদের মধ্যে লিজেন্ডারি ব্যান্ড স্করপিয়ন্স আর ব্রায়ান এডামসের মতো বিখ্যাতরা ছিলেন।

পুনশ্চ ২ – পিংক ফ্লয়েড Live at Pompeii নামে ইতালির পম্পেই কলোসিয়ামে একটি কনসার্ট করেছিল ১৯৭২ এ, কনসার্টে টেকনিশিয়ানরা আর ছাড়া আর কোন শ্রোতা ছিল না!

পিংক ফ্লয়েড সাজেশন –
Comfortably Numb
Bike
Paint Box
A Saucerful of Secrets
Hey You
Echoes
Welcome to the Machine
Time
Brain Damage
Sorrow
The Division Bell…..

ক্লান্ত বোধ করছেন?! এই তালিকায় কমপক্ষে ৫০ টা গান রাখার ইচ্ছে ছিল, ইচ্ছেটা কোনমতে হজম করে ফেলেছি! শুনুন এবং পিনিকে থাকুন! ভালো লাগলে Add Meh! 😀